বিশেষ প্রতিবেদন,কলকাতা: কয়েকদিন আগেই পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে রাজনীতি করছেন বলে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যমে অভিযোগ করেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বুধবার যেন সে কথারই জবাব দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিন সকালে টুইট করে তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রীয় সরকারের উচিত, পরিযায়ী শ্রমিকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১০ হাজার টাকা করে জমা দেওয়া।’ শুধু তাই নয়, পিএম–কেয়ার্সের একটি অংশ থেকে ওই টাকা পরিযায়ী শ্রমিকদের দেওয়ার দাবি জানান তিনি। যদিও মুখ্যমন্ত্রী ‘পুলটিস’ করছেন বলে তাঁর পাল্টা সমালোচনা করেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষও।
উল্লেখ্য, কয়েকদিন আগেই শ্রমিক স্পেশ্যাল ট্রেন পাঠানো নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যে শ্রমিক স্পেশ্যাল নয়, করোনা স্পেশ্যাল ট্রেন পাঠিয়েছে। সে কথা উল্লেখ করে অমিত শাহ বলেছিলেন, ‘পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী যে সব মন্তব্য করেছেন, তা কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এ কথা বলে তিনি পরিযায়ী শ্রমিকদেরই অপমান করেছেন।’ বুধবার পরিযায়ী শ্রমিক নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ কেন্দ্রীয় সরকার এবং বিজেপি করেছে, সে–সবেরই জবাব দেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘দুর্দশা কাটিয়ে উঠতে প্রত্যেক গরিব পরিবারকে কেন্দ্রের উচিত আগামী ৬ মাস সাড়ে ৭ হাজার টাকা করে দেওয়া। আর এখনই সবাইকে ১০ হাজার টাকা করে দিক তারা।’
শুধু তাই নয়, এদিন বিকেলে নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে তিনি পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য রাজ্য সরকার কী কী ব্যবস্থা করেছে এবং কত টাকা খরচ করেছে, তার বিস্তারিত খতিয়ান তুলে ধরেন। তিনি পরিষ্কার বলেন, ‘পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য পশ্চিমবাংলার সরকার যে সব কাজ করেছে, দেশের আর কোনও রাজ্য তেমন কোনও কাজ করে দেখাতে পারেনি।’ তিনি জানান, ইতিমধ্যে বিভিন্ন রাজ্য থেকে পশ্চিমবাংলায় ৮ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক ফিরে এসেছেন। ১০ জুনে সেই সংখ্যাটা ১০ লক্ষে পৌঁছে যাবে। পাশাপাশি তিনি কারও প্ররোচনায় প্রভাবিত না হওয়ার জন্য পরিযায়ী শ্রমিকদের পরামর্শ দেন। বলেন, ‘আমি যদি পরিযায়ী শ্রমিকদের ঢুকতে না দিতাম, তা হলে ভিনরাজ্য থেকে এত মানুষ এই রাজ্যে এলেন কী করে?’
মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যের পরই সমালোচনায় মুখর হয়ে ওঠেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তিনি বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে রাজনীতি করছেন। আসলে এখন তিনি বিপাকে পড়ে গিয়েছেন। তাই তাঁর মুখে এখন উল্টো সুর শোনা যাচ্ছে।’ তিনি অভিযোগ করেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী প্রথম থেকেই পরিযায়ী শ্রমিকদের রাজ্যে ঢুকতে দিতে অনীহা দেখিয়ে এসেছেন। ‘দিদি’ যে কেমন, তা এখন পরিযায়ী শ্রমিকরা বুঝে গিয়েছেন। সেটা বুঝতে পেরেছেন মুখ্যমন্ত্রীও। তাই এখন ‘পুলটিস’ করতে আসরে নেমে পড়েছেন।’ কিন্তু তাতে তাঁর লাভ কিছুই হবে না। বলেও জানিয়েছেন তিনি।